সংক্ষেপে "বারমুডা ট্রায়াঙ্গল " রহস্য



বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ! পৃথিবীর
রহস্যময় স্থানগুলোর তালিকা করা
হলে সে তালিকার প্রথম দিকে
থাকবে এই নামটি । রহস্যময়, ভূতুড়ে,
গোলমেলে, অপয়া সব বিশেষণই
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের জন্য উপযুক্ত ।
সারা বিশ্বজুড়ে সব চাইতে
অলোচিত রহস্যময় অঞ্চল হচ্ছে এই
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল । এর রহস্য
উদঘাটনের জন্য অসংখ্য গবেষণা
চালানো চয়েছে, এই স্থানকে
নিয়ে অন্তর্জাতিক গনমাধ্যমে
অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত
হয়েছে, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল
তৈরি করেছে ডকুমেন্টারি । তবু
আজো এই স্থানটির রহস্যময়তার
নেপথ্যে কি রয়েছে তা জানা
সম্ভব হয় নি ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকাটি
আটলান্টিক মহাসাগরের একটি
বিশেষ ত্রিভুজাকার অঞ্চল
যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও
উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে
নিখোঁজ হয়ে গেছে চিরদিনের
জন্য । কিন্তু সত্যিকার অর্থে
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভৌগলিক
অবস্থান নির্দিষ্ট নয় । কেউ মনে
করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের
মত যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব
ফ্লোরিডা, বাহামা এবং
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জ এবং
ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক
অঞ্চল জুড়ে । আবার কেউ কেউ
এগুলোর সাথে মেক্সিকোর
উপসাগরকেও যুক্ত করেন । তবে
লিখিত বর্ণনায় যে সকল অঞ্চলের
ছবি ফুটে ওঠে তাতে বোঝা যায়
ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল,
সান হোয়ান, পর্তু রিকো, মধ্য
আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপূঞ্জ
এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা
স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা জুড়ে
এটি বিস্তৃত ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিষয়ে
বিভিন্ন লেখক রেফারেন্স
হিসেবে সর্বপ্রথম ক্রিস্টোফার
কলম্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন ।
কলম্বাস লিখেছিলেন যে তাঁর
জাহাজের নবিকেরা এই অঞ্চলের
দিগন্তে আলোর নাচানাচি এবং
আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন ।
এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের
উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার
কথাও বর্ণনা করেছেন । এরপরেও
অসংখ্য ঘটনা বিশ্ববাসীর সামনে
এসেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে
কেন্দ্র করে ।
১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫টি যুদ্ধ
বিমান প্রশিক্ষণ নেবার জন্য উদ্দয়ন
করে । কিছুক্ষণ পরেই তারা সেই
ভয়ংকর বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের
কাছে চলে যায় এবং কেন্দ্রে
ম্যাসেজ দেয় যে তারা সামনে
আর কিছুই দেখতে পারছে না যতদূর
চোখ যাচ্ছে শুধুই কুয়াশা । অদৃশ্য
হবার শেষ মুহূর্তে তাদের শেষ কথা
ছিল “আমাদের বাঁচাও, উদ্ধার কর
এখান থেকে আকাশের কুয়াশা
আমাদের কোথায় যেন নিয়ে
যাচ্ছে !”
এর পর আর তাদের কাছ কোন ধরনের
ম্যাসেজ পাওয়া যায়নি ।
পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করার
জন্য একটি উদ্ধারকারী দল
সেদিকে পাঠানো হয় কিন্তু
তাদেরকেও আর খুজে পাওয়া যায়
নি । এর পরপরই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত
হয় ।
১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের
১৬ তারিখে অ্যাসোসিয়েট
প্রেসের এক প্রবন্ধে সাংবাদিক ই
ভি ডাবলিউ জোনস বারমুডা
ট্রায়াঙ্গেলের অস্বাভাবিক
ঘটনার কথা লিখে একে
বিশ্ববাসীর নজরে আনেন । ১৯৫২
সালে ‘ফেট’ ম্যাগাজিন-এর জর্জ
এক্স সান্ড লিখেন “সি মিসট্রি
অ্যাট আওয়ার ব্যাক ডোর”। জর্জ
এক্স সান্ড ৫ জন ইউএস নেভি সহ ১৯
নং ফ্লাইটের নিখোঁজ সংবাদ
ছাপেন । শুরু হয় বারমুডা রহস্য !
১৯৫৯ সালের ১৭ জানুয়ারী স্টার
এরিয়েল নামের একটি বিমান
লন্ডন থেকে জ্যামাইকা যাচ্ছিল
। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে এটি
বারমুডার আকাশে উড়ল । তখন
আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক ও সুন্দর
। আর সমুদ্র ছিল শান্ত । ওড়ার ৫৫
মিনিট পর বিমানটি অদৃশ্য হয়ে
গেল । এ নিয়ে অনেক অনুসন্ধান
হলো । কিন্তু সমুদ্রের কোথাও
বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে
পাওয়া গেল না । বিমানটি অদৃশ্য
হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি রাতে । ১৮
তারিখ রাতে এক অনুসন্ধানী দল
জানাল, সেখানকার সমুদ্রের
বিশেষ বিশেষ একটি জায়গা
থেকে অদ্ভূত একটি আলোর আভাস
দেখা যাচ্ছে । এ ঘটনার এক বছর
আগে সেখান থেকে
রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে
গিয়েছিল একটি ডিসি-৩ বিমান
। সেটি যাচ্ছিল সানজুয়ান
থেকে সিয়ামি । এছাড়াও
অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ আছে
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে নিয়ে ।
এই স্থানটি নিয়ে আরেকটি গুজব
আছে, অনেকেই মনে করে
ভিনগ্রহের মানুষেরা যখন পৃথিবীত
আসে তখন তারা এই স্থানকে
তাদের ঘাটি বানিয়ে নেয় এই
কারনে এখানে যা কিছু আসবে
সেটি গায়েব করে দিবে যাতে
করে তাদের কেউ ক্ষতি বা চিহ্ন
খুজে না পায় ।
এই অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক
হলো, কোনো জাহাজ এই ত্রিভুজ
এলাকায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের
মধ্যেই তা বেতার তরঙ্গ প্রেরণে
অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে
জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে
যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয় ।
একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না
পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে
যায় ।
মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত
২০০ বছরে এ এলাকায় কমপক্ষে
৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং
২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে
গেছে । এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে
মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক
ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা
বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন
তোলে । ঘটনা তদন্তে এর মধ্যে
সবচাইতে বিজ্ঞানসম্মত যে
ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে তা হলো,
এলাকাটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য
হচ্ছে এখানে স্বাভাবিকের
চাইতে কুয়াশা অনেক বেশি এবং
এর ঘনত্বও তুলনামূলকভাবে বেশি ।
ফলে নাবিকেরা প্রবেশের পরই
দিক হারিয়ে ফেলে এবং
তাদের মধ্যে একপ্রকার
বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। হয়তো এ
বিভ্রান্তির ফলেই তারা
যথাযথভাবে বেতার তরঙ্গ
পাঠাতে পারে না । প্রমাণ
হিসেবে বিজ্ঞানীরা
দেখিয়েছেন, আধুনিক কালের
সমস্ত জাহাজ জিএসএম প্রযুক্তি
ব্যবহার করে থাকে, তাদের
একটিও এ সমস্যায় পড়েনি ।
আর ধংসাবশেষ খুজে না পাবার
ব্যপারে বিজ্ঞানীরা বলেন,
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে সমুদ্রের
গভীরতা এতোটাই বেশি যে
এখানে যদি কোন বিমান বা
জাহাজ হারিয়ে যায় বা বিধ্বস্ত
হয় তবে তার ধংসাবশেষ খুজে
পাওয়া খুবই অসাধ্য একটি ব্যাপার ।
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন
স্যাটেলাইট ব্যবহার করে যদি এর
চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় তারপরেও
সেটি উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব
একটি ব্যাপার ।

Popular posts from this blog

বিশ্বের ৭০ টি অঞ্চলের ভৌগোলিক উপনাম

মানবদেহের অস্থিসমূহের নাম ও সংখ্যা